দ্য সিলেট

বৃহস্পতিবার , ১৯ জুন, ২০২৫, ৫ আষাঢ়, ১৪৩২
বৃহস্পতিবার , ১৯ জুন, ২০২৫, ৫ আষাঢ়, ১৪৩২

সুব্রত বাইনকে দিয়ে যা করাতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ

দ্য সিলেট ডেস্ক :

সংগৃহীত ছবি।

রাজধানীসহ সারা দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র করছিল সুব্রত বাইন ও তার বাহিনী। টার্গেট ছিল বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য ছিল বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করা। গোয়েন্দা তদন্তে উঠে এসেছে, এই পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নিষিদ্ধ একাধিক নেতা। বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা এনে কিলার ভাড়া, অস্ত্র সংগ্রহ এবং সন্ত্রাসীদের সংগঠনের কাজ চলছিল চুপিসারে।

সুব্রত বাইন দাবি করেন, ২০২২ সালে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসে আয়নাঘরে রাখা হয়। সেখানে রড দিয়ে পিটিয়েছে। ৫ আগস্ট রাত ৩টার দিকে তাকে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়। নিজে বাঁচার জন্য সঙ্গে অস্ত্র রাখেন বলে জানান সুব্রত।

গতকাল বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে এসব তথ্য জানান মুব্রত বাইন। পরে বিচারক সুব্রত বাইনের আট দিন ও মোল্লা মাসুদসহ তিনজনকে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ছয় দিনের রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ, আরাফাত ইবনে নাসির ওরফে শ্যুটার আরাফাত ও এম এ এস শরীফ।

এদিকে, সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে কি তথ্য পাওয়া গেল- জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ইলিয়াস কবির বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে লোমহর্ষক তথ্য পাওয়া গেছে। অস্ত্র-গুলি ও টাকার উৎস জানার চেষ্টা চলছে। এলাকাভিত্তিক তাদের সদস্যদের সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া গেছে। ওইসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাদের (সুব্রত বাইন) কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলির বিষয়ে তথ্য বেরিয়ে আসে। অস্ত্র ও গুলি সীমান্ত থেকে সংগ্রহের পর তারা আরাফাত ও শরীফের কাছে পাঠিয়ে দেয়। ওই অস্ত্রগুলো মগবাজার, শাহবাগ, গুলশান ও বাড্ডা এলাকার সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। ওই সন্ত্রাসীরা ৫ আগস্টের পর সুব্রত বাইন ও মাসুদের দলে যোগ দেয়। তারা সবাই উঠতি বয়সি এবং এলিট শ্রেণির বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায়, দেশকে অস্থিতিশীল করার মিশনে নেমেছিল তারা। টার্গেট কিলিংয়ের পর ক্ষমতার দ্বন্দ্বে এক দলের নেতাকে অন্য দলের নেতারা খুন করেছে বলে তা প্রচার করারও পরিকল্পনা ছিল তাদের।

টার্গেটকৃত তিন দলের (বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি) ভেতর রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরি হলে আওয়ামী লীগ সুবিধাজনক অবস্থানে চলে আসবে বলে তাদের ধারণা ছিল। আর এজন্য প্রতিবেশী একটি দেশে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। অস্ত্র-গুলি ও ক্যাডারদের জন্য টাকাও পাঠাত ওই নেতারা। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হতো।

হুন্ডির টাকা বেশির ভাগই লেনদেন হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ সীমান্তে। এজন্য তারা কুষ্টিয়ায় আস্তানা গেড়েছিল বলেও গোয়েন্দারা জানান।

সুব্রত বাইন জানান, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় তার নাম প্রথম দিকে রাখা হয়। এ কারণে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। পরে বিএনপির সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করেও তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। ৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা তাকে এড়িয়ে যান। এ কারণে তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষ নেন।

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ