দ্য সিলেট

শনিবার , ২১ জুন, ২০২৫, ৭ আষাঢ়, ১৪৩২

শাবি ছাত্রীকে ধর্ষণ: গ্রেপ্তার আদনান ‘ছাত্রলীগ কর্মী’, পার্থ ‘জুলাই যোদ্ধা’

দ্য সিলেট প্রতিবেদন:

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) এক আদিবাসী এক ছাত্রীকে অচেতন করে ধর্ষণ ও নগ্ন ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তাঁর দুই সহপাঠীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত শান্ত তারা আদনান ও স্বাগত দাশ পার্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে আদনান ছিলেন ‘ছাত্রলীগ কর্মী’ আর পার্থ ‘জুলাই আন্দেলনে’ সাক্রিয় ছিলেন।

এ ঘটনায় শুক্রবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেছেন ওই ছাত্রী।

এদিকে ধর্ষণের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করছেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (২০ জুন) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন তারা। মানববন্ধনে অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে রাত সাড়ে ৯টায় তাদের গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নেয় সিলেট কোতোয়ালি থানার একদল পুলিশ। অভিযুক্তদের মধ্যে আদনান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলার ঘটনায় করা একটি মামলার আসামি। অন্যদিকে স্বাগত দাস পার্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য বিষয়ক সংগঠন দিক থিয়েটারের কোষাধ্যক্ষ বলে জানা গেছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২ মে ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী সিলেট শহরের রিকাবিবাজারে একটি কনসার্টে গিয়েছিলেন। পরে তাকে চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে অচেতন করে সুরমা আবাসিক এলাকায় একটি মেসে নিয়ে যান এবং সেখানে তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে তাকে সেই ভিডিও ও ছবির সাহায্যে ব্ল্যাকমেইল করা হয় যেন এ ব্যাপারে কারও সঙ্গে কথা না বলে। এ ঘটনায় সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন মামলা করেছেন ওই ছাত্রী। মামলায় গ্রেপ্তার শান্ত তারা আদনান ও স্বাগত দাস পার্থ ছাড়াও দুই থেকে তিনজনকে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে।

সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি মো. জিয়াউল হক মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তাদের একজনকে ক্যাম্পাস থেকে এবং আরেকজনকে সুরমা আবাসিক এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরে কোতোয়ালি থানায় দুজনকে আসামি এবং একজনকে সন্দেহভাজন করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলা করা হয়। এই মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদেরকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিক সত্যতা মিলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ইসমাঈল হোসেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আমরা ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে শুক্রবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে মানববন্ধনে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জেমিমা জামান সেলিয়া বলেন, ‘ভাবতেও আমাদের অনেক লজ্জা লাগছে যে, যাদের সাথে আমরা এতোদিন একসাথে বসে ক্লাস করেছি তারা এতোটা অমানুষ ছিল ভাবতে পারিনি। আমরা এই ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আমরা চাই অভিযুক্ত দুইজনকে যেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।’

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ও ভয়েস ফর জাস্টিসের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আলী আক্কাস বলেন, ‘একই ব্যাচের দুই ছেলে শিক্ষার্থী কর্তৃক মেয়ে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক। এরকম হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজের ব্যাচমেটের কাছেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। দেশের প্রচলিত আইনে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমরা। পাশাপাশি ভুক্তভোগী মেয়েকে মানসিকভাবে সাহস যোগানো আমাদের দায়িত্ব।

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ