দ্য সিলেট

বৃহস্পতিবার , ১৯ জুন, ২০২৫, ৫ আষাঢ়, ১৪৩২
বৃহস্পতিবার , ১৯ জুন, ২০২৫, ৫ আষাঢ়, ১৪৩২

সিলেটের চেঙের খালে ভাসছে শতশত পশুর চামড়া

দ্য সিলেট প্রতিবেদন :

সিলেটে কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের দাবি, ঈদের দিন বেশিরভাগ চামড়াই বিক্রি হয়নি। ঈদের দ্বিতীয় দিনেও সরকার নির্ধারিত মূল্যে তারা সংগ্রহ করা পশুর চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। এতে চামড়ায় পচন ধরে দুর্গন্ধ বের হওয়ায় তা রাস্তাঘাটে ফেলেই চলে যান অনেকে। অনেকে চামড়াগুলো সিলেট সদর উপজেলার চেঙের খালে ফেলেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও সিলেট বিভিন্ন বাজারের রাস্তায় পচা চামড়া পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এতে করে পচা চামড়ার দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ও বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সিলেট সদর উপজেলার পিটারগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সামাদ চৌধুরী বলেন, সকালে বের হয়ে দেখি চেঙের খালে শতশত পশুর চামড়া ভাসছে। চামড়ায় পচন ধরে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। দুষিত হচ্ছে চেঙের খালের পানি। এতে ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধে এলাকাবসীর দম বন্ধ অবস্থা।

সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীদের দাবি, ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা না করে ইচ্ছেমতো দর নির্ধারণ করে দেয় সরকার। সারা বছর লোকসান গুণে ঈদে এসেও একই অবস্থার মধ্যে পড়তে হয় তাদের। তাছাড়া ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে ব্যবসায়ীদের বড় অঙ্কের টাকা বকেয়া রয়েছে।

এ বছর সরকার নির্ধারিত দর অনুযায়ী ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় কিনবেন; গত বছর এই দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৫৫ টাকা ৬০ টাকা গতবছর যা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ছিল। এছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হবে ট্যানারিতে, যা গত বছর ছিল ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা। আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা, যা আগের বছর ছিল ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা। এছাড়াও প্রতি বর্গফুটে চামড়ার দামের পাশাপাশি ছোট গরুর আয়তন হিসেবে লবণযুক্ত চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ১১৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ দাম ঢাকায় হবে ১৩৫০ টাকা।

সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে। অন্যদিকে এ বছর ব্যাংক থেকেও লোন পাননি ব্যবসায়ীরা। যে কারণে এবছর চামড়া কিনতে অনেকে সাহস পানিনি। আবার যারা কিনেছেন তারাও বিক্রি নিয়ে পড়েছেন শঙ্কায়।

সিলেট শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির কার্যকরি সদস্য হামিদ আহদ বলেন, ‘সরকারের নির্ধারণ কারা দামে খোদ ট্যানারি ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে চান না। তারা পানির দামে চামড়া দরকষাকষি করেন। বাধ্য হয়ে অনেক সময় আমরা তাদের দামে চামড়া বিক্রি করে দিই। তাও অর্ধেক টাকা বকেয়া পড়ে থাকে। বছরে বছরে বকেয়ার পরিমাণ আরও বাড়ে। এতে অনেকে ব্যবসায়ী মূলধন হারিয়ে এ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর সরকার প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করলেও ট্যানারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে হয়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে।’

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের ‍মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘সরকার চামড়া বিক্রির দাম প্রকাশ করেছে। কীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে তাও বলে দিয়েছে। বিনামূল্যে লবন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার। প্রত্যেক এলাকায় চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও চামড়া ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় নিয়ম মানতে নারাজ।’

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ