দ্য সিলেট রিপোর্ট||

সিলেট কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালটি গত সাত বছর ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। বহু চেষ্টার পরও এটি সচল করা সম্ভব হয়নি। প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই টার্মিনাল এখন কোনো কাজেই আসছে না। ২০১৯ সালে তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ. মান্নান এই টার্মিনালটির উদ্বোধন করেন।
ট্রাক মালিক ও শ্রমিক পক্ষের দাবি, টার্মিনালটি ভুল জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে। মহাসড়ক থেকে এর দূরত্ব বেশি হওয়ায় ট্রাকচালকেরা সেখানে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাদের ভাষ্য, ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পাশে টার্মিনালটি তৈরি করা হয়েছে, যা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে। এ ছাড়া চালক ও সহকারীদের জন্য টার্মিনালে নেই কোনো প্রয়োজনীয় সুবিধা। রেস্টুরেন্ট, মসজিদ, ওয়ার্কশপসহ যেসব সুবিধা থাকার কথা, তার কিছুই সেখানে নেই। তাই চালকেরা ট্রাক টার্মিনালে রাখতে অনিচ্ছুক। অন্যদিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশন বলছে, তাদের কাজ ছিল টার্মিনালটি ইজারা দেওয়া। তারা সেটি দিয়েছেন, এখন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ইজারাগ্রহীতার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চন্ডিপুল থেকে হুমায়ুন রশিদ চত্বর পর্যন্ত সড়কের এক পাশে দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক এলোমেলোভাবে পার্ক করে রাখা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে এবং সৃষ্ট হচ্ছে যানজট। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা, হচ্ছে প্রাণহানি। অন্যদিকে টোল আদায়ের নামে চলছে চাঁদাবাজি। চাঁদা না দিলে চালক-সহকারীদের মারধরের অভিযোগও রয়েছে।
দ্য সিলেটের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবু সরকারপন্থীদের সঙ্গে ট্রান্সপোর্ট মালিকদের দ্ব›দ্বদেখা দেয় টার্মিনালের ইজারা নিয়ে। মালিকগ্রæপ বেশি অর্থ দিয়ে ইজারা পাওয়ায় ক্ষিপ্ত হন আবু সরকার। তার নির্দেশে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা ট্রাকগুলো টার্মিনালে না রেখে রাস্তায় পার্কিং শুরু করেন।
সেই সময় ট্রাক প্রতি ১৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে আবু সরকার ট্রাকপ্রতি টোল ৫০ টাকা করার দাবি তোলেন। একপর্যায়ে সমঝোতা হয় ২৫ টাকা আবু সরকারের পকেটে যাবে, আর বাকি ২৫ টাকা যাবে ইউনিয়নের তহবিলে। কিন্তু এরপরও তিনি পুরো ৫০ টাকাই দাবি করেন, ফলে শ্রমিকদের সঙ্গে আবু সরকারের বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। এরপর থেকে ট্রাকগুলো আর টার্মিনালে যায় না।
এই বিষয়ে মালিক গ্রুপ সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়। অভিযোগ করা হয় ইজারা নেওয়ার আগে আবু সরকার প্রায় ৬-৭ মাস ধরে সিটি কর্পোরেশনকে কোনো রাজস্ব না দিয়ে টার্মিনাল ও পারাইরচক মোড় থেকে টোল আদায় করে আসছিলেন। এছাড়া অভিযোগে আরও ছিল, শ্রমিক নামধারী কিছু চাঁদাবাজ দক্ষিণ সুরমার তেলিবাজার, পারাইরচক, ফতেহপুর, জৈন্তাপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ‘সহায়তা ভাতা’ ও ‘কল্যাণ ভাতা’ নামে চাঁদা আদায় করছে। তাছাড়া ওভারলোডের অজুহাতে প্রতি গাড়ি থেকে ৪-৫ শত টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়, যদিও এটি দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। এই অভিযোগের কোনো সুরাহা করেনি প্রশাসন।
ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের এহেন কর্মকান্ড কারণে পণ্য পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হতে থাকলে বিষয়টি নিয়ে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন সংশ্লিষ্টরা। তাতেও ফলাফল আসেনি।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জিলু মিয়া বলেন, “প্রথমত, মহাসড়ক থেকে টার্মিনালের দূরত্ব বেশি। দ্বিতীয়ত, টার্মিনালের ভেতরে খাওয়ার হোটেল, ওয়ার্কশপ, মসজিদসহ কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। যে কারণে চালকেরা টার্মিনালে আসতে চায় না। গেলো মাসেও সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে বৈঠক করে এসব সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। প্রধান নির্বাহী আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি সমাধানের চেষ্টা করবেন। আমরা চেষ্টা করছি ট্রাকগুলো টার্মিনালে ফিরিয়ে আনতে। তবে সিটি কর্পোরেশন যদি সহযোগিতা না করে, তাহলে আমাদের করার কিছু নেই।”
এ বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, “আমরা প্রতি বছর টার্মিনালটি ইজারা দেই। ইজারাগ্রহীতা এর দেখভাল করেন। টার্মিনালে ট্রাক কেন পার্ক করা হচ্ছে না, তা ইজারাগ্রহীতারাই ভালো বলতে পারবেন।”