দ্য সিলেট

বৃহস্পতিবার , ১৯ জুন, ২০২৫, ৫ আষাঢ়, ১৪৩২
বৃহস্পতিবার , ১৯ জুন, ২০২৫, ৫ আষাঢ়, ১৪৩২

রেজিস্ট্রার অফিসে জাল সনদে দলিল লেখক

সাবেক মন্ত্রী মেননের তদবির

দ্য সিলেট রিপোর্ট।

সিলেটে এক দলিল লেখকের বিরুদ্ধে জাল সনদে লাইসেন্স নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার নাম রাশেদুজ্জামান রাশেদ। তিনি সিলেট দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিজেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে তিনি দলিল লেখকের লাইসেন্স নিয়েছেন। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভোল পাল্টিয়েছেন রাশেদ। বর্তমানে তিনি সিলেট বিমানবন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালে দলিল লেখকের লাইসেন্সের জন্য তাকে সুপারিশ করেন সাবেক মন্ত্রী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। পেয়েও যান দলিল লেখকের লাইসেন্স। এই লাইসেন্সের বদৌলতে প্রায় ১ যুগ ধরে তিনি এখনো বহাল তবিয়তে কাজ করছেন। সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক পরিচয় বদল করেন রাশেদ। আগে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবলীগ নেতা। এখন ভোল পাল্টিয়ে হয়েছেন সিলেট মহানগরের বিমানবন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক।

আরো জানা গেছে, রাশেদুজ্জামান রাশেদ যখন দলিল লেখক লাইসেন্সের আবেদনে তিনি সিলেটের দ্য এইডেড হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছেন বলে উল্লেখ করেন। সঙ্গে একটি সার্টিফিকেট জমা দেন। সেখানে সাল ২০০৬, রোল নম্বর ৩০৭৬৭৯ এবং রেজিস্ট্রেশন নং ১০৩০৪৩/২০০৪-০৫ উল্লেখ করেন। কিন্তু ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে যোগাযোগ করা হলে এই নাম, রোল ও রেজিস্ট্রেশনের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সিলেট শিক্ষা বোর্ডে গেলে এই সার্টিফিকেটের কোনো তথ্য পাওয়া য়ায়নি।

জানা গেছে, সম্প্রতি শফিকুল ইসলাম সুজন নামে এক ব্যক্তি সিলেট জেলা সাবরেজিস্ট্রার বরাবর একটি অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি করে কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন সিলেট জেলা রেজিস্ট্রার মো. জহুরুল ইসলাম।

রাশেদুজ্জামান রাশেদের বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার হেতিমগঞ্জে। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ছিলেন। বর্তমানে নগরীর খাসদবির এলাকায় বাস করেন। রাশেদুজ্জামান রাশেদ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিছবাহ সিরাজের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর কিছুদিন আড়ালে চলে যান রাশেদ।

সম্প্রতি তিনি প্রকাশ্যে এসে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা থেকে হয়ে গেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা। আওয়ামী সরকারের আমলে রাশেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বিভিন্ন জাল দলিল তৈরি করে সরকারি সম্পত্তি, চা-বাগানের জায়গা আওয়ামী লীগ নেতা মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের নামে রেজিস্ট্রারি করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাশেদুজ্জামান রাশেদ। তিনি বলেন, আমি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার। এসব অভিযোগ মিথ্যা। তবে তদন্ত কমিটি করে প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন।

সিলেট জেলা রেজিস্ট্রার মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, সত্যতা যাচাই-বাছাই করতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেব।

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ