দ্য সিলেট ডেস্ক:

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতনের পর নানাভাবে দেশের রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু গণহত্যার দায় মাথায় নিয়ে কোনোভাবেই ফিরতে পারছে না তারা। বরং দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। দলটির নিবন্ধনও স্থগিত। এ ছাড়া দলটির সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছিল পুনর্গঠিত হয়ে আওয়ামী লীগ ফেরার চেষ্টা করতে পারে।
বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে বড় কোনো অভিযোগ নেই সেরকম নেতকার্মীদের সামনে রেখে রাজনীতিতে মাথাচাড়া দিতে পারে দলটি। এর মধ্যে নানা উদ্যোগও দৃশ্যমান হচ্ছিল। তবে সম্প্রতি শেখ হাসিনার এক সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে নতুন তথ্য।
কয়েকদিন আগে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে একটি লিখিত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হাসিনা। সাক্ষাৎকারে তিনি তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ‘প্রত্যাখ্যান’ করেছেন এবং চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করেছেন। এ সময় তিনি তার পরিবারের নেতৃত্ব ছাড়া দেশের ভবিষ্যৎ ভূমিকা পালনে রিফর্ম (পুনর্গঠিত) আওয়ামী লীগের ফিরে আসার ইঙ্গিতও দেন।
গত বুধবার আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ দেশের ভবিষ্যৎ ভূমিকা পালনে ফিরে আসবে, সেটা সরকারে হোক আর বিরোধী দলে হোক এবং তার পরিবারের নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
ভারতের নয়াদিল্লিতে নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনার দেওয়া সাক্ষাৎকার গত বুধবার আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স, এএফপি ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে প্রকাশিত হয়। গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই প্রথম তিন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হলো।
এর আগেও রিফাইন্ড বা পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসার আলোচনা সামনে আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা চলে। কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন নিয়ে বৈঠক হয় বলে গণমাধ্যমে উঠে আসে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তো নিষিদ্ধ নয়। তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, যা যে কোনো সময় উঠে যেতে পারে।’ প্রধান উপদেষ্টার ওই বক্তব্য থেকেও আওয়ামী লীগের ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখছেন দলটির নেতাকর্মীসহ সমর্থকরা।
আওয়ামী লীগের সূত্র বলছে, শেখ হাসিনাসহ দলের অনেকে ভারতে আছেন। সেখান থেকে দল পুনর্গঠনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলে তাতে শেখ হাসিনার ইচ্ছা ও মতামত বেশি গুরুত্ব পাবে বলে ধরে নেওয়া যায়।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা আরো বলেন, আওয়ামী লীগকে আগামী বছরের নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া হলে দলটির লাখ লাখ সমর্থক এই নির্বাচন বয়কট করবে। হাসিনা জানান, তার দলকে বাদ দিয়ে হওয়া নির্বাচনের মাধ্যমে যেই সরকারই হোক তাদের সময়ে তিনি দেশে ফিরবেন না এবং তিনি ভারতেই অবস্থান করবেন। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই প্রথম তিনি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
রয়টার্সকে শেখ হাসিনা বলেন, পরবর্তী সরকারের নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধতা থাকা আবশ্যক। দেশের লাখ লাখ মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা ভোট দেবে না। সমর্থকদের অন্য দলেও ভোট দিতে বলেননি শেখ হাসিনা। তার আশা, নির্বাচনের আগে তার দল কার্যক্রম চালাতে পারবে।


