দ্য সিলেট প্রতিবেদন:

সিলেটে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। প্রশাসনের সাথে বৈঠক শেষে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টায় তারা এ ঘোষণা দেন।
সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস, কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল হক মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দ্য সিলেটকে বলেন, প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছি।
তিনি বলেনবিভাগীয় কমিশনার বলেছেন, আমাদের দাবিগুলো বিবেচনার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন। এছাড়া গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেটসহ বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে তিনি ইতোমধ্যে বিআরটিএ চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করেছেন। তিনি (বিভাগীয় কমিশনার) বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে সিলেটে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং আমাদের দাবিগুলোর বিষয়ে একটি সুষ্ঠু সমাধান দিতে অনুরোধ করেছেন।
এদিকে বিকেল সাড়ে তিনটায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সাথে বৈঠকে বসেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী। এসময় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের দাবিগুলো আমরা শুনেছি। এগুলো বিবেচনার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবো। তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন। তিনি বলেন, আমাদের আশ্বাসে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে ওই বৈঠকে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল জয়নাল আবেদীন, মহানগর জামায়াতের আমীর মো. ফখরুল ইসলামসহ প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা এবং পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে কর্মবিরতি শুরুর প্রায় ৭ ঘন্টা পর মঙ্গলবার দুপুর ১ টায় কর্মবিরতি ‘আপাতত স্থগিত’ করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। এসময় সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস, কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল হক জানিয়েছিলেন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়েছে। তাই পরীক্ষার্থীসহ বিদেশযাত্রী ও সাধারণ যাত্রীদের সুবিধার্থে আমরা আপাতত আমাদের কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণা করলাম। পরবর্তীতে বিভাগীয় কমিশনারের সাথে বৈঠকের পরে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবো।
এর আগে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়াসহ ৬ দফা দাবিতে মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতিতে সিলেট জেলায় সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ ছিলো। কিছু গাড়ি সড়কে বের হলেও চলাচলেও বাধা সৃষ্টি করে পরিবহণ শ্রমিকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। সকালে কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হওয়ার মানুষ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি সময়মতো।
তাদের ৬ দফা দাবিগুলো হলো- সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ এর ৩৬ ধারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান ২৫ বছর, সিএনজি ও ইমা লেগুনা এর ক্ষেত্রে ১৫ বছর ইকোনোমিক লাইফ নির্ধারণ করার প্রজ্ঞাপন বাতিল করা, সিলেটের সকল পাথর কোয়ারীর ইজারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও সনাতন পদ্ধতিতে বালু মহাল এবং পাথর কোয়ারী খুলে দেওয়া, বিআরটিএ কর্তৃক সকল গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বাতিল ও গণ পরিবহন ও পণ্য পরিবহনের উপর আরোপিত বার্ধিত টেক্স প্রত্যাহার করা, সিলেটের সকল ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করন বন্ধ, বিদ্যুৎ মিটার ফেরত ও ভাংচুরকৃত মিলের ক্ষতিপূরণ এবং গাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া পাথর ও বালুর ক্ষতি পূরণ দেওয়া, সিলেটের পরিবহণ মালিক-শ্রমিক ও ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে অবিলম্বে সিলেট থেকে প্রত্যাহার করা ও সড়কে বালু ও পাথরবাহী গাড়িসহ সকল ধরনের পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের হয়রানী বন্ধ করা।