দ্য সিলেট প্রতিবেদন |

গেল জুন মাসে সিলেট বিভাগে ৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় চারটি ও বাকি দুটি ঘটেছে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায়। এছাড়া ফুপা কতৃক স্কুল ছাত্রী, সহপাঠী কতৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও চলন্ত বাসে এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এতে করে জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, বিচারহীনতার কারণে ধর্ষণের মতো ঘটনা বেড়েছে।আইনের কঠোর প্রয়োগ না থাকায় অপরাধীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এ জন্য সামাজিক অবক্ষয়কে দায়ী করছেন তারা।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সিলেট নগরীর বিমানবন্দর এলাকায় সম্বন্ধীর (স্ত্রীর বড় ভাই) স্কুল পড়ূয়া (১৫) মেয়েকে ধর্ষণ করেছে আপন ছোট বোনের জামাই। মেয়েটি বর্তমানে ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ ঘটনায় ফুপা আব্দুল হালিমকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি সিলেট নগরীর বিমানবন্দর থানার দরগাবাড়ি রামপুর এলাকার ডা. আব্দুল হেকিমের ছেলে।
এর আগে বুধবার (২৫ জুন) বিকেলে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ধর্ষণের পর এক কিশোরীকে (১৬) গাড়িতে করে নদীরপাড়ে নিয়ে ফেলে পালিয়ে যায় এক প্রেমিক। উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের সমধল গাঙ্গপাড় এলাকা থেকে ওই কিশোরীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এলাকাবাসী জানায়, ভুক্তভোগী ওই তরুণীর সঙ্গে জাবেদের প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। বুধবার দুপুরে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের পর জাবেদ তার বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের সমধল গাঙ্গপাড় ফেলে পালিয়ে যায়।
সোমবার (২৩ জুন) সিলেটের জৈন্তাপুরে বন্ধুদের সাথে নিয়ে তালাক দেওয়া স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, কিছুদিন আগে ওই নারীকে তালাক দেন স্বামী মুমিন। শনিবার রাতে জরুরি কথা আছে বলে ওই নারীকে ফের ডেকে নেন মুমিন। পরে একটি নির্জন হাওড়ে নিয়ে তিনি ও তার দুই বন্ধু মিলে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।
এর আগে (১৯ জুন) সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) এক ছাত্রীকে অচেতন করে ধর্ষণ ও নগ্ন ভিডিও ধারণের অভিযোগে দুই শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করে। আটকরা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থ।
জানা গেছে, গত ২ মে সন্ধ্যারাতে সহপাঠী শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থের সঙ্গে শহরের কনসার্টে যাচ্ছিলেন ওই ছাত্রী। কনসার্টে যাওয়ার পূর্বে তারা ওই ছাত্রীকে সুরমা এলাকার একটি মেসে নিয়ে যান। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে অচেতন করে ধর্ষণ করেন আদনান এবং পার্থ। একইসাথে এই ঘটনার ভিডিও এবং মেয়েটির নগ্ন ছবি ধারণ করে।
রোববার (১৫ জুন) হবিগঞ্জে চলন্তবাসে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানায়, সিলেট থেকে তিনি বানিয়াচং যাওয়ার জন্য ‘মা এন্টারপ্রাইজ’ নামের অপর একটি বাসে ওঠেন। শেরপুরে অন্য যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর তাকে বাসে একা পেয়ে চালক সাব্বির ও হেলপার লিটন পালাক্রমে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন।
এর আগে রোববার (৮ জুন) সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার কদমতলী এলাকার ডায়মন্ড আবাসিক হোটেলে এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
পুলিশ জানায়, শনিবার কুরবানির ঈদের দিন রাত ১০টার দিকে ঢাকা থেকে কদমতলী বাসস্ট্যান্ডে আসেন এক গার্মেন্টসকর্মী। বাড়ি ফেরার বাস না পেয়ে তিনি রাত যাপনের জন্য দক্ষিণ সুরমার ডায়মন্ড আবাসিক হোটেলে উঠেন। পরে হোটেলের ম্যানেজার জোরপূর্বক ওই তরুণীরকে ধর্ষণ করেন। এরপর আরও তিন যুবক রাতভর পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে।
মানুষের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মানুষ অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় উগ্র। তাছাড়া ধর্ষণের বিচারগুলো সঠিক পক্রিয়াতে হচ্ছে না। আইনের ফাঁক দিয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে যেকারণে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। সচেতনতার পাশাপাশি আইনের সঠিক প্রয়োগ না হলে ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি।’
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমশিনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে ইতোমধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। পুলিশ গুরুত্বের সাথে প্রত্যকটি ধর্ষণের মামলা তদন্ত করছে।’