দ্য সিলেট

রবিবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৩ আশ্বিন, ১৪৩২
রবিবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৩ আশ্বিন, ১৪৩২

বিয়ানীবাজারে ব্যাঙের ছাতার মতো কোচিং সেন্টার

মিসবাহ উদ্দিন, বিয়ানীবাজার |

ছবি: সংগৃহীত।

সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা ও সরকারি কলেজের আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো ব্যাপক হারে গড়ে উঠছে নামে বেনামে কোচিং সেন্টার। মাধ্যমিক থেকে শুরু করে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত এসব কোচিং সেন্টার বানিজ্যে পরিণত হয়েছে। অতিরিক্ত আয়ের আশায় স্কুল, কলেজ ফাঁকি দিয়ে শিক্ষকরা এসব কোচিং সেন্টারে গিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন।

একাধিক জরিপ থেকে জানা যায়, প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি শিক্ষার্থী প্রাইভেট/কোচিং পড়ে। মেট্রোপলিটন, বিভাগীয় ও জেলা ও উপজেলায় এ হার সবচেয়ে বেশি। জরিপে আরও উঠে আসে যে, শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট টিউটরের কাছে না পড়লে নানা সমস্যায় পড়ে, এমনকি তারা ফেল করে। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় নম্বর কম দিয়ে, মানসিক নির্যাতন করে, বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করে এক শ্রেণির শিক্ষকেরা তাঁদের কাছে পড়তে বাধ্য করছেন। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকেরা।

সারপার দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা ফয়জুল হক শিমুল বলেন, আমি কোচিং বিরোধী। সরকার যখন সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করে তখন থেকে আমি কোচিং এর বিরোধিতা করে আসছি। কারণ সৃজনশীল পদ্ধতিটা হচ্ছে ক্লাসে পাঠ বুঝে নেয়া। কোন গাইড বা সাজেশন এর সহযোগিতা না নেওয়া। এটা নিলে ছাত্ররা গাইড নির্ভর ও কোচিংনির্ভর হয়ে যায় কোচিংয়ের শিক্ষকরা গাইড থেকে পাঠ দান করায়। আমি বলবো একজন ছাত্র যদি একটি পাঠ ঠিকমতো বুঝে নেয় তাহলে যেরকম প্রশ্ন আসুক না কেন সে উত্তর দিতে পারবে।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, অনেক শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনোযোগী নন। কোচিং বাণিজ্যেই তাঁরা অতি উৎসাহী। শ্রেণিকক্ষের লেখাপড়া পর্যাপ্ত না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের পরিচালিত কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে বাধ্য হয়। এতে দরিদ্র শ্রেণির অভিভাবকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আয়ের এক বড় অংশ সন্তানদের প্রাইভেট পড়াতে এবং শিক্ষার উপকরণ জোগাতে চলে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাদশ ও স্নাতক শিক্ষার্থীরা জানান আমাদের কলেজে ক্লাসে শিক্ষকরা ও শিক্ষার্থীরা সময় মত থাকেন না অনেকে বাহিরে সকালে কলেজ সময় চলাকালীন প্রাইভেট পড়তে চলে যায়, আমরা কলেজে আসি অপেক্ষা করি ক্লাস করবো কিন্তু অনেকে সকালে তাদের ক্লাস শেষ করে নেয় যার ফলে আমরা ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের পরিবারের যদি টাকা তাকতো তাহলে আমরা হয়তো এই ভাবে প্রাইভেট পড়তাম কলেজে স্কুলে ক্লাস করতাম না আমাদের টাকা নেই তাই কলেজে ক্লাস করার জন্য আসি।

বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে কোচিং নির্ভরতা রোধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. সাব্বির আহমদ। তিনি বলেন, “সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা—কলেজ চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থী বা শিক্ষক, কেউই কোচিংয়ে যেতে পারবে না। কেউ গেলে তাকে অনুপস্থিত হিসেবে গণ্য করা হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মিলাদ মো. জয়নুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাব্যবস্থা যাতে এই কোচিং সেন্টার বাণিজ্যের কারণে নষ্ট না হয় আমাদেরকে সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, এর পাশাপাশি স্কুল কলেজের দায়িত্বশীলরা আরো সচেতন ও কঠোর হতে হবে শিক্ষার্থীরা যাতে ক্লাসে তাদের পড়া সম্পন্ন করে যাতে করে তারা স্কুল কলেজের সময়ে বাহিরে প্রাইভেট পড়তে না হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার সভাপতি আব্দুদ দাইয়ান বলেন, “শিক্ষার্থীদের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কোচিংয়ে যাওয়া এবং কিছু শিক্ষকের এ সময় প্রাইভেট চর্চা নিঃসন্দেহে শিক্ষাব্যবস্থার জন্য হতাশাজনক। এই বাস্তবতা থেকে উত্তরণের জন্য প্রশাসনিক উদ্যোগের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও আত্মনিরীক্ষা প্রয়োজন। অধ্যক্ষ সাব্বির আহমদের উদ্যোগকে আমরা শিক্ষক সমাজ স্বাগত জানাই এবং এর বাস্তবায়নে আমরা নৈতিক ও পেশাগতভাবে পাশে থাকবো।”

সচেতন মহলের দাবী শিক্ষার এই বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে না পারলে একটি সুসভ্য ও মেধাসম্পন্ন জাতি গঠন দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। তাই কোচিং বাণিজ্যের অবসান হওয়া খুবই জরুরি। বাণিজ্য বন্ধে শুধু আইন ও নীতিমালা করলেই চলবে না, চাই আইনের যথাযথ প্রয়োগ।

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ