দ্য সিলেট

শুক্রবার , ২০ জুন, ২০২৫, ৬ আষাঢ়, ১৪৩২

বিয়ানীবাজারে টিকা কার্ড সংকট, ইপিআই টিকা নিতেও ভোগান্তি

বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি:

ফাইল ছবি।

সিলেটের বিয়ানীবাজারে বিড়ম্বনা আরেক নাম ইপিআই টিকা কার্ড। এতদিন শিশুদের ম্যানুয়াল ইপিআই টিকা কার্ড দেওয়া হলেও বর্তমানে চালু হয়েছে অনলাইন সেবা। এ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন সেবাপ্রার্থীরা। অনলাইন আবেদন, আইডি তৈরিকরণ ও বিতরণ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। ফলে প্রায় ৮ মাস ধরে উপজেলায় টিকা কার্ডের সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাস্থ্য সহকারীরা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। এ নিয়ে সেবাপ্রার্থীসহ সর্বসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সর্বজনীন টিকাকরণ কর্মসূচি- ইপিআইয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে মূলত নবজাতক, শিশু এবং অন্তঃসত্ত্বাদের বিভিন্ন প্রকার টিকা দেওয়া হয়। প্রথম দিকে যক্ষ্মা (টিবি), ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশ (পারটুসিস), ধনুষ্টংকার (টিটেনাস), পোলিও ও হামের টিকা দেওয়া হতো। বর্তমানে ইপিআই কর্মসূচির অধীনে ১০টি টিকা পাচ্ছেন শিশু, গর্ভবতীসহ সাধারণ মানুষ। এসব টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বিনামূল্যে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের টিকা ইপিআই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সূত্র বলেছে, সরকারি ব্যবস্থাপনা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় ইপিআই টিকাদান কর্মসূচি চালুর পর থেকেই ছিল নির্ধারিত ম্যানুয়াল কার্ড। নবজাতক, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য এতদিন ধরে ম্যানুয়াল কার্ডের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হতো। ওই একই কার্ডের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাদের প্রদান করা হতো নির্ধারিত ফলোআপ সেবা। কিন্তু সরকার ম্যানুয়াল কার্ড বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বেড়েছে ভোগান্তি

নতুন করে ইপিআই কর্মসূচির আওতায় সেবাপ্রার্থীদের জন্য অনলাইন কার্ড চালু করেছে সরকার। এ জন্য সেবাপ্রার্থীকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রোফাইল বা আইডি তৈরি করতে হচ্ছে। তারপর মা-বাবার জন্ম নিবন্ধন সনদ ও শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্য দিয়ে অনলাইন কার্ড পূরণ করতে হয়। এরপর সেই কার্ড প্রিন্ট করে স্বাস্থ্য সহকারীর কাছ থেকে সেবা নেওয়া যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার জটিলতায় পড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই।

সুহানা আক্তার সুমি নামে এক সেবাপ্রার্থী বলেন, টিকার কার্ড আগে ম্যানুয়াল ছিল। বাচ্চাকে নিয়ে টিকা দেওয়ায় কোনো ঝামেলা ছিল না। ম্যানুয়াল কার্ড বন্ধ হওয়ায় অনেকেই সময়মতো টিকা নিতে পারেনি। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী স্বাস্থ্য সহকারী বলেন, একসঙ্গে দুই কাজ করতে গিয়ে টিকা কার্ডের আবেদন ও কার্ড ডাউনলোড বেশি করা যায় না। এতে সেবাপ্রার্থীরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। সেবাপ্রার্থীরা আমাদের সঙ্গে রাগারাগি করেন। আমরা তো আমাদের সাধ্য মতো কাজ করে যাচ্ছি।

জানা গেছে, প্রায় ৮ মাস ম্যানুয়াল টিকা কার্ড সরবরাহ বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের পর একজন গ্রাহক টিকা কার্ড ডাউনলোড করতে পারেন। তবে অনলাইন আবেদনে সামান্যতম ভুলত্রুটি হলেই বিড়ম্বনার শেষ নেই। কার্ড ডাউনলোড ও নিবন্ধন জটিলতাতো আছেই। এসব কারণে কাক্সিক্ষত সময়ে অনেকেই টিকা নিতে পারছেন না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মনিরুল হক খান বলেন, একটা পুরনো পদ্ধতি থেকে নতুন পদ্ধতিতে টিকার কার্ড বিতরণ ও সেবা প্রদান চালু হয়েছে। প্রথম দিকে একটু বিড়ম্বনা হতে পারে। যে কোনো কিছুই প্রথম দিকে আয়ত্তে আসতে একটু সময় লাগে। তবে এ ধরনের সমস্যা ও নিবন্ধন জটিলতা দ্রুতই নিরসন হবে। এ ছাড়া কোনো সেবা প্রার্থী বিড়ম্বনায় পড়লে আমাদের কাছে আসতে পারেন।

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ