সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ
দ্য সিলেট প্রতিবেদন |

সিলেটের বন্ধ পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেয়াসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছেন পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। বুধবার (১৮ জুন) দুপুরে সংবাদ সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মলেনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘সিলেট জেলা পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’-এর মুখপাত্র শাব্বির আহমেদ ফয়েজ। লিখিত বক্তব্যে তিনি তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন।
দাবিগুলো হলো-
১. সরকারিভাবে অনুমোদিত কোয়ারিগুলো দ্রুত খুলে দেওয়া হোক।
২. পাথরবাহী যানবাহন চলাচলের জন্য হুমায়ুন রশীদ চত্বর এলাকায় পুলিশের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
৩. কোয়ারিগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করতে হবে।
২০১২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর জাফলংকে পরিবেশ-প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা দিয়ে গেজেট প্রকাশ হয়। এরপর থেকে কয়েকটি ধাপে জাফলং, ভোলাগঞ্জসহ সিলেটের ৫টি কোয়ারি থেকে বালু ও পাথর কোয়ারির ইজারা কার্যক্রম বন্ধ করা হয়।
এরপর ২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি জাফলংকে ‘ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য’ ঘোষণা করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে জাফলংয়ের ২২ দশমিক ৫৯ একর জায়গাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়।
তবে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর সবগুলো পাথর কোয়ারি থেকেই ব্যাপক লুটপাট শুরু হয়। এরপর থেকেই পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবারের এই সংবাদ সম্মেলন বক্তারা বলেন, সিলেট অঞ্চলের পাথর শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে, জীবন ও জীবিকার উপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। এতে করে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাচ্ছে, তেমনি তীব্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শ্রমিক, ট্রাকচালক, হেলপার, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার পরিবার।
বক্তারা অভিযোগ করেন, ভারতের মেঘালয় থেকে কয়লা ও পাথর আমদানির সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পিয়াইন, ধলাই, গোয়াইন ও সারি নদীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এতে একদিকে নদীগুলোতে ব্যাপক হারে পলি জমে প্রবাহ কমে যাচ্ছে এবং অপরদিকে মূল্যবান ভূমি পরিণত হচ্ছে বালুময় চরে। পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় অবৈধ চুরি, চাঁদাবাজি ও সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাথর প্রবেশ করছে। ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে।
আগামী ২২ জুনের মধ্যে দাবি মানা না হলে পরবর্তী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনটির আহ্বায়ক আজিজুল জলিল আহমদ ও সদস্য সচিব নজির আহমদ স্বপন।
এদিকে গত শনিবার জাফলং পরিদর্শনে যান পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। পরিদর্শন শেষে রিজওয়ানা হাসান বলেন, পর্যটকবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি আর লিজ দেওয়া হবে না। জাফলং পর্যটন কেন্দ্রকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।এমনটি করা গেলে এ অঞ্চলের পাথর শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
উপদেষ্টা বলেন, জাফলং ইসিএ এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এরকম অবৈধ কার্যক্রমের সাথে কেউ জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে জাফলং ও আশেপাশের এলাকার পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। এখান থেকে এগুলো সরাতে হবে। প্রয়োজনে অবৈধ পাথর ক্রাশারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।
উপদেষ্টার নির্দেশনার পর মঙ্গলবার থেকে স্টোন ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করণ অভিযান শুরু করেছে টাস্কফোর্স।