দ্য সিলেট

বৃহস্পতিবার , ১৯ জুন, ২০২৫, ৫ আষাঢ়, ১৪৩২
বৃহস্পতিবার , ১৯ জুন, ২০২৫, ৫ আষাঢ়, ১৪৩২

উৎমাছড়ায় পর্যটক প্রবেশে বাধা, যা বলছেন বাধাদানকারীরা

দ্য সিলেট প্রতিবেদন |

ছবি: সংগৃহীত।

সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ‘উৎমাছড়া’ পর্যটন স্পটে ঈদের ছুটিতে পর্যটক প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মাদক সেবন ও অশ্লীলতার কথা বলে তৌহিদি জনতার পরিচয়ে স্থানীয় একদল ব্যক্তি গত রোববার পর্যটকদের সেখান থেকে বের করে দেন। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

এদিকে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ঘটনার সাথে জড়িতরা বলছেন, ‘তারা শুধু ধর্মের দাওয়াত’ দিতে গিয়েছিলেন। এরইমধ্যে তারা নিজেদের ভূল স্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, ‘তারা শুধু ধর্মের দাওয়াত’ দিতে গিয়েছিলেন। ‘পর্যটক আসা নিয়ে তাদের কোন আপত্তি নেই’।

বাধাদানকারীদের একজন যুব জমিয়তের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুফতি রুহুল আমীন সিরাজি। তিনি বলেছেন, ‘ঘটনাটির সমাধান হয়েছে। পর্যটক আসুক। তবে স্থানীয়দের জন্য বিরক্তিকর কিছু যেন না হয় সেটি তদারকির অনুরোধ করেছি প্রশাসনকে’।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার বলছেন, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সব পক্ষের সাথে বৈঠক করেছি। যারা পর্যটক প্রবেশে বাধা দিয়েছিলেন তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তারা বলেছেন পর্যটক প্রবেশে তারা আর বাধা দেবেন না। তারা তাদের ভূল বুঝতে পেরেছেন।

প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার সবগুলো পর্যটন স্পটেই পর্যটকদের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয়দের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে নিয়মিত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

কী হয়েছিলো উৎমাছড়ায়?

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের চরারবাজার এলাকার ‘উৎমাছড়া’ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। মূলত পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে সাদা পাথরের মেলা -এমন দৃশ্যের কারণেই এটি পর্যটকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়।

এই স্পটে প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ভিড় অনেকে বেড়ে যায়। কিন্তু এবার ঈদের পরদিন পর্যটকদের অনেকে সেখানে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন। সেদিন তৌহিদি জনতা ও আলেম-ওলামার নাম করে একদল ব্যক্তি সেখানে গিয়ে পর্যটকদের এলাকা ছাড়ার অনুরোধ করছেন এমন ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

ওই ভিডিওতে একজনকে বলতে শোনা যায় যে, ‘এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উৎমাছড়াকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে চলতে দেওয়া হবে না’।
তিনি পর্যটকদের উদ্দেশ্য বলছিলেন ‘এখানে মদ্যপান ও অশ্লীল কার্যকলাপের কারণে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তাই দয়া করে আপনারা এখান থেকে চলে যান’। এরপর এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

এ নিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দ্রুত তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (১০ জুন) উপজেলা প্রশাসন ঘটনার সাথে জড়িত সংগঠনটির নেতাদের ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে নিয়ে একটি বৈঠকে বসে।

বৈঠক শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার জানান, যারা পর্যটন কেন্দ্র চলবে না বলেছিলো বা পর্যটকদের চলে যেতে বলেছিলো, তারা তাদের ভুল স্বীকার করেছে। তারা প্রশাসনকে জানিয়েছে যে তারা ‘ধর্মের দাওয়াত দিতে গিয়েছিলেন’।

তিনি বলেন, “তারা কারও সাথে আলাপ না করেই এসব করেছিলো। কিন্তু পরে আমাদের বলেছে যে পর্যটক আসায় কোন সমস্যা নেই। সবাই সহযোগিতা করবে। তবে তারা কিছু বিষয় তুলে ধরেছে। সেগুলো নিয়ে আমরা পর্যটকদের সচেতন করবো”

যুব জমিয়ত উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন সিরাজী জানিয়েছেন যে, প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান হয়েছে ও ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়েছে। “আমাদের একটি টিম গিয়েছিলাম সেখানে ধর্মের দাওয়াত দেয়ার জন্য। আমাদের এক ভাই ভুলে পর্যটন কেন্দ্র বন্ধের কথা বলেছে। পর্যটক আসবে, আমাদের আপত্তি নেই।”

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ