দ্য সিলেট

বৃহস্পতিবার , ১৯ জুন, ২০২৫, ৫ আষাঢ়, ১৪৩২
বৃহস্পতিবার , ১৯ জুন, ২০২৫, ৫ আষাঢ়, ১৪৩২

সিলেটের চার উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

দ্য সিলেট ডেস্ক |

ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। তলিয়ে যাচ্ছে বসতভিটা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার। কোথাও নদীর ডাইক ভেঙে আবার কোথাও নদী উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে বানের পানি। ঘরবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুঁটছেন।

এদিকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত এবং পর্যপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ জুন) সন্ধ্যা ছয়টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ প্রতিবেনে দেখা গেছে, সন্ধ্যা ছয়টায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর চারটি পয়েন্টে পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্ট ৯৯ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে ১৯৪ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৪৮ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-


জকিগঞ্জ: সীমান্তবর্তী এই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। জকিগঞ্জ বাজার প্লাবিত হওয়ায় ব্যবসায়ী ও পথচারীরা বেশ দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বানের পানি ঢুকে পড়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই ও ভাখরশাল গ্রাম, পৌরসভার ছয়লেন এলাকা, খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল, বীরশ্রী ইউনিয়নের সুপ্রাকান্দি, লাফাকোনা ও লক্ষীবাজারসহ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া পৌর শহরের কেছরী গ্রামে নদী উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে জকিগঞ্জ পৌর শহরের বেশির ভাগ এলাকায় প্লাবন দেখা দিয়েছে। ছবড়িয়া, সেনাপতির চক, ইছাপুর, পিল্লাকান্দি, আমলসীদ, গদাধর ও বড়ছালিয়াসহ অর্ধশতাধিক এলাকায় নদীর বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করছে। নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষজন বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসন সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।’

বিয়ানীবাজার: উপজেলার অন্তত ৭টি ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ অঞ্চল এখন পানির নিচে। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে রাস্তাঘাট। এছাড়া টানা বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের নিজ বাহাদুরপুর, গজারাই, মোল্লাপুর ইউনিয়নের আলীনগর, লামানিদনপুর, কটুখালিপার, লাসাইতলা, দুবাগ ইউনিয়নের দক্ষিণ দুবাগ, চরিয়া, শেওলা ইউনিয়নের বালিঙ্গা, কাকরদিয়া শেওলা, মুড়িয়া ইউনিয়নের সারপার, তাজপুর, নয়াগ্রাম, কোনাগ্রাম, তিলপারা ইউনিয়নের মাটিজুরা, দাসউরা, তিলপারা, কুড়ারবাজার ইউনিয়নের গোবিন্দশ্রী, মোহাম্মদপুর, আখাজনা, বৈরাগীবাজার, এবং আলীনগর ও চারখাই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম বন্যায় প্লবিত হয়েছে।

এছাড়া মোহাম্মদপুর মাদ্রাসা এবং বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রায় ৩০টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে গেছে। বৈরাগীবাজার ও দুবাগ বাজার বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া রাস্তাঘাটে পানি উঠে যাওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মুস্তাফা মুন্না জানান, ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে কবলিত এলাকার বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য ৪৪ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৫০ হাজার টাকা ও ১৪৫ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে।

গোলাপগঞ্জ: উপজেলার বুধবারিবাজার ইউপির প্রায় ১২০০ পরিবার বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবারী বাজার ইউনিয়নের কালিজুরী, বাগিরঘাট, শিকপুর, ছত্তিশ সহ কয়েকটি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও বাঘা, গোলাপগঞ্জ সদর, লক্ষীপাশা, ঢাকাদক্ষিণ, লক্ষণাবন্দ ও পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিধস হয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সল মাহমুদ ফুয়াদ জানান, বুধবারী বাজার ইউপির ১২ হাজার ৫০টি পরিবার ঘরবন্দী রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পাশাপাশি ১৪৮ প্যাকেট শুকনা খাবার, ২০মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

ওসমানীনগর: উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে দুর্ভোগ তৈরি করেছে। নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ির আঙ্গিনায় পানি চলে আসায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে এবং পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পেলে খসরুপুর, লামা তাজপুর, সুন্দিখলা, চর তাজপুরসহ কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উসমানপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।

ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, ৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বিতরণের জন্য ১৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ২০ টন চাল মজুদ রাখা হয়েছে।

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ