দ্য সিলেট

রবিবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৩ আশ্বিন, ১৪৩২
রবিবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৩ আশ্বিন, ১৪৩২

জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে বিস্তৃত হচ্ছে বন্যা

দ্য সিলেট ডেস্ক |

ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় বিস্তৃত হচ্ছে বন্যা। প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। চোখের পলকেই তলিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার। দুই উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে আবার কোথাও নদী উপচে হু হু করে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে বানের পানি। এসব এলাকার বাসিন্দারাদের মাঝে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। কেউ স্বজন কেউবা আবার আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে উঠছেন।

আমাদের জকিগঞ্জ সংবাদদাতা জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী এই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এরই মধ্যে জকিগঞ্জ বাজারে প্লাবন দেখা দিয়েছে। এতে ব্যবসায়ী ও পথচারীরা বেশ দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বানের পানি ঢুকে পড়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, রোববার (১ জুন) দিনগত রাত থেকে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই ও ভাখরশাল গ্রাম, পৌরসভার ছয়লেন এলাকা, খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল, বীরশ্রী ইউনিয়নের সুপ্রাকান্দি, লাফাকোনা ও লক্ষীবাজারসহ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া পৌর শহরের কেছরী গ্রামে নদী উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে জকিগঞ্জ পৌর শহরের বেশির ভাগ এলাকায় প্লাবন দেখা দিয়েছে। ছবড়িয়া, সেনাপতির চক, ইছাপুর, পিল্লাকান্দি, আমলসীদ, গদাধর ও বড়ছালিয়াসহ অর্ধশতাধিক এলাকায় নদীর বাঁধ উপচে পানি প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকার ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন।

জকিগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রী ইউনিয়নের বাসিন্দা সাংবাদিক লিমন তালুকদার বলেন, হঠাৎ করে ঢল নামায় কুশিয়ারা নদীর পানি খুব দ্রুত বাড়ছে। নদীর পাড় ঘেঁষে অনেক ঘরবাড়ি আছে, এখনই পানি না নামলে কয়েকদিনের মধ্যেই প্লাবিত হওয়ার ভয় আছে।

স্থানীয়দের আশঙ্কা, পানি বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, সময়মতো বাঁধ সংস্কার না করায় এমন দুর্দশার সৃষ্টি হয়েছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসন সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। দুর্গত লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে প্রস্তুতি চলছে। কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।’

আমাদের বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি মিসবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন, ঢলের পানিতে বিয়ানীবাজারে বন্যা পরিস্থিতি আরও বিস্তৃত হয়েছে। এরই মধ্যে উপজেলার দুবাগ, শেওলা, কুড়ারবাজার, মুড়িয়া, মাথিউরা, তিলপাড়া ও পৌরসভার কিছু অংশে প্লাবন দেখা দিয়েছে। চলাচলের রাস্তা, হাটবাজার, ও বসতবাড়ি পনিতে তলিয়ে গেছে।

সিলেট-বিয়ানীবাজার মহাসড়কের আঙ্গারজুর এলাকার উপর দিয়ে বইছে বানের পানি। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুবাগ, শেওলা ও কুড়ারবাজার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বৈরাগীবাজার প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

ঝুঁকির মূখে রয়েছে কুশিয়ারা নদীর গজুকাটা এলাকার ডাইক। বিজিবি সদস্যরা বালুবর্তী বস্তা ফেলে ক্ষতিগ্রস্থ ডাইক মেরামত করেছেন। তবে প্রবল স্রোতের কারণে এ বাঁধ যেকোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মুস্তাফা মুন্না জানান, বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় কন্ট্রোল রুম স্থাপন এবং ৬৮টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ আছে। ইতোমধ্যে বন্যা দুর্গতদের মাঝে বিতরণের জন্য ৪৪ মেট্রিকটন চাল, নগদ ৫০ হাজার টাকা ও ১৪৫ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে।

সিলেটের নদ-নদীগুলোর সর্বশেষ পরিস্থিতি

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যা ছয়টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্ট পানি বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারা নদীর জকিগঞ্জের আমলশীদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৮৭ সেন্টিমিটার, বিয়ানীবাজারের শেওয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

কী আছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে

এদিকে রোববার (১ জুন) দুপুর থেকে সিলেটে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অনেকটা কমেছে। সোমবার (২ জুন) দিনভর সিলেটে পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। যদিও পূর্বভাস বলছে আরও ৫দিন সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমলেও উজানের ঢল অব্যাহত আছে। যে কারণে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আরো দুই দিন পানি বাড়বে। এরপর পানি কমে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ