দ্য সিলেট প্রতবেদন :

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সিলেট অঞ্চলে বৃহস্পতিবার থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবারও দিনভর ভারী বৃষ্টি হয়েছে। শনিবার বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আরও বেড়েছে। এরই মধ্যে সিলেট নগরীর ছড়া, খাল-নালা উপচে পানি বাসা বাড়ীতে প্রবেশ করছে। নগরীর বেশিরভাগ রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।
শনিবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কোথাও হাঁটু সমান কোথাও কোমর সমান পানি। এ অবস্থায় অনবরত ঝরছে বৃষ্টি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আগামী বুধবার পর্যন্ত সিলেটে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
শনিবার দুপুরের পর টানা আড়াইঘন্টার ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গিয়েছিল নগরীর জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা এলাকা। এ দুই পয়েন্টে হাঁটু সমান পানি ছিল। এছাড়াও রিকাবিবাজার, আম্বরখানা, ইলেক্ট্রিসাপ্লাই, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল সড়ক, বাগবাড়ী, উত্তর বাগবাড়ী এলাকা, মিরাবাজার, সুরমাতীরের মহাজনপট্টি, কালিঘাট, কাষ্টঘর, উপশহর-সুবহানীঘাট সংলগ্ন এলাকা, বিমানবন্দর, চৌকীদেখী, শাহপরাণ, কদমতলী ও সংলগ্ন এলাকায়, কাজিরবাজার, তালতলা, জামতলা, মাছিমপুর, শাহপরাণসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাটগুলো বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা পয়েন্ট থেকে পানি নেমে গেলেও নিচু এলাকাগুলো এখনো জলমগ্ন রয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নগরীতে ১৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে সুরমা নদীর পানি সিলেট নগরীতে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিপদসীমার ১৪৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও নগরীর ড্রেন-খাল ও ছড়া উপচে প্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ইতোমধ্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশন জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে একটি কন্ট্রোল রুম গঠন করেছে। কন্ট্রোল রুমের মুঠোফোন নম্বর: ০১৭১১৯০৬৬৪৭।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ‘ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে বৃষ্টি থেমে গেলে দ্রুত পানি নেমে যাবে। এরই মধ্যে বেশিরভাগ জায়গার পানি নেমে গেছে।’

এদিকে পাহাড়ী ঢল ও ভারী বর্ষণে জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে এখনও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী জানিয়েছেন ঢলের পানিতে গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কের কজওয়েতে যানচলাচল সীমিত রয়েছে।
এছাড়াও পাহাড়ী ঢলে কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নদনদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সবকটি নদনদীর পানি এখনও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, সুরমা, কুশিয়ারাসহ সব কটি নদনদীর পানি বাড়ছে। সারি-গোয়াইন ও ধলাই নদের পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত) ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটাই আমাদের জন্য বিপদের কারণ। ভারতে বৃষ্টি হলেই পাহাড়ি ঢল নামে। এর ফলে দ্রুত নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নিম্নাাঞ্চলে পনি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। ইতোমধ্যে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র জাফলং, বিছনাকান্দি এবং সাদাপাথর পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে; পাশাপাশি জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনা খাবারের মজুত রাখা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী জানান, উপজেলার গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কের নিচু অংশের অংশবিশেষ প্লাবিত হয়েছে। তবে বৃষ্টি কমে গেলেই পানি নেমে যাবে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার বলেন, নিম্নাঞ্চলে পানি থাকলেও কোনো গ্রাম বা এলাকা এখন পর্যন্ত প্লাবিত হয়নি। উপজেলায় ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।