জৈষ্ঠ প্রতিবেদক | দ্য সিলেট টোয়েন্টিফোরডটকম

টানা বৃষ্টি আর ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানিতে সিলেট বিভাগের সবকটি নদনদীর পানি বাড়ছে। ধলাই নদ, সারিগোয়াইন, ডাউকি ও সারি নদীতে পানি বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে এই তিন নদীর পানি। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে রাতের মধ্যেই এসব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে সিলেটের তিন উপজেলায় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয় জানায়, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদে শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় পানির স্তর ছিল ১০.১০ সেন্টিমিটার। একই সময় গোয়াইনঘাট উপজেলার সারিগোয়াইন নদীর পানি ছিল ৯.৪৭ সেন্টিমিটার। এই নদীর বিপৎসীমা হল ১০.৮২ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ এই নদীর পানি বিপৎসীমার মাত্র ১.৩৫ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার ডাউকি নদীর পানির স্তর হল ১৩.০০ সেন্টিমিটার। শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় এই নদীর পানি ছিল ১১.৫৯ সেন্টিমিটার। এই নদীর পানি বিপৎসীমার মাত্র ১.১০ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে। জৈন্তাপুর উপজেলার সারি নদীর পানির স্তর হল ১২.৩৫ সেন্টিমিটার। শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় এই নদীর পানি ছিল ১২.০০ সেন্টিমিটার। সারি নদীর পানি বিপৎসীমার মাত্র ০.৩৫ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে।
এদিকে টানা বর্ষণের ও পাহাড়ি ঢলে ফলে কোম্পানীগঞ্জ ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তলিয়ে গেছে পর্যটন এলাকা সাদাপাথর। ঢলের পানিতে অস্থায়ী অবকাঠামো এবং স্থানীয় কয়েকশ’ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মালামাল ভাসিয়ে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।
অপরদিকে নিম্নচাপের কারণে অতিবৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সিলেট বিভাগের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় আগামী দুই দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) বৃষ্টিপাত হয়েছে ৭৮.৪ মিলিমিটার। আর শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১২৩.২ মিলিমিটার।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, সিলেটে বন্যা নির্ভর করে ভারতের বৃষ্টিপাতের ওপর। দেশেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে আবার ভারতেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আবার দেশে আগামী তিনদিন বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা আছে। যদিও সিলেটের কোনো নদীর পানি এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি তারপরও ভারতের পাহাড়ি ঢলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার শঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে মেঘালয় হিলসের পানি সারি গোয়াইন, ডাউকি দিয়ে বেশি নামবে। তাই এসব নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষকে সর্তক থাকতে হবে।
ভারি বর্ষণ ও ভূমিধসের সতর্কবার্তা
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিলেটসহ দেশের সাত বিভাগের অনেক জায়গায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। ফলে পাঁচ জেলার পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সাতক্ষীরা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত স্থল গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর অথবা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে প্রথমে স্থল নিম্নচাপ এবং পরে আরও দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ হিসাবে শেরপুর ও তৎসংলগ্ন মেঘালয়ে অবস্থান করেছে।
এর প্রভাবে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
সতর্কবার্তায় আরও বলা হয়, অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে।