মো. আমির আলী, বালাগঞ্জ :

মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহায় সারা দেশের ন্যায় সিলেটের বালাগঞ্জে ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৮ হাজার ৮৯৬টি পশু। উপজেলায় ১০ হাজার ২৩৬টি পশুর চাহিদা রয়েছে। এতে দাপ্তরিক হিসেবে পশুর সংকট থাকবে ১ হাজার ৩৪০টি। তবে আশপাশের উপজেলাগুলোর হাটে পশু উঠলে এ সংকট থাকবে না বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। বালাগঞ্জ ও আশপাশের উপজেলায় খামারি এবং প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। খামারিদের দাবি, দাম ভালো পেলে তারা লোকসান কাটাতে পারবে
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্যে ঘেটে জানা যায়, উপজেলায় তালিকাভুক্ত ৫৯৯ জন খামারী রয়েছে। খামারগুলোতে গরু উৎপাদন হয়েছে ১ হ্জার ৯৮৭টি। ছাগল ভেড়া ও অন্যান্য পশু উৎপাদন হয়েছে ২৩৭টি। এছাড়া বাকি পশুগুলো ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে পালন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট উৎপাদন হয়েছে ৮ হাজার ৮৯৬টি পশু।
বালাগঞ্জ উপজেলায় কোরবানির জন্য গবাদি পশু প্রয়োজন ১০ হাজার ২৩৬ টি। হিসেব মতে গবাদি পশু সংকট রয়েছে ১ হাজার ৩৪০টি। চলতি বছর উপজেলায় ষাঁড় গরু উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ৮৯৬, বলদ ৫২টি। সর্বমোট গরু উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ৯৪৮টি, মহিষ ৯৬টি এবং ছাগল ৮৫২টি।
উপজেলার বালাগঞ্জ ইউনিয়নের খামারি আশিক মিয়া বলেন, গত বছর আমাদের খামারে দুগ্ধ উৎপাদনের পাশাপাশি কোরবানির জন্য পশু পালন করা হয়েছে। এ বছর আমাদের ৩টি বড় ষাঁড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত। আশা করি দাম ভালো পেলে লোকসান কাটিয়ে ওঠতে পারবো। কারণ পশু খাদ্যের দাম বেড়েছে।
সাদেকপুর এলাকার খামারি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, স্থানীয়ভাবে পালিত কোরবানির পশুর চাহিদা বেশি। আমাদের খামারে নিজেদের উৎপাদিত ঘাস ও দানাদার খাদ্যে ষাঁড়গুলো কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে আমাদের সমস্যা হচ্ছে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি ও খাদ্যের দাম বেশি। বিক্রি মূল্যের ওপর নির্ভর করবে আমাদের লাভ-লোকসান।
বালাগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান মুহিব বলেন, এলাকায় একাধিক খামারি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাবারে এসব ষাঁড় প্রস্তুত করেছে। তারা যদি ষাঁড়গুলোর দাম ভালো পায় তাহলে টিকে থাকতে পারবে। লোকসানে পড়লে খামারি সংখ্যা কমে যাবে এবং বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে।
বালাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আ জ ম সালাহউদ্দিন বলেন, এ বছর আমরা কোরবানির পশু প্রস্তুত করার জন্য সার্বিক তত্ত্বাবধান করেছি। যথাসাধ্য চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। আর পশুগুলো প্রাকৃতিক খাবারে বেড়ে ওঠেছে। খামারীদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে যথাযথ পদ্ধতিতে পশু লালন-পালনের পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও রোগাক্রান্ত ও অস্বাস্থ্যকর পশু যাতে বিক্রি না হয় সে জন্য জনবলের তীব্র সংকট সত্ত্বেও প্রতিটি কোরবানীর হাটে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যদি কেউ অসাধু পন্থা অবলম্বন করে গরু-ছাগল প্রভৃতি মোটাতাজা করার চেষ্টা করে তবে তা অবহিত করার জন্য তিনি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
তিনি বলেন, উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদার আলোকে কোনো ধরণের পশুর সংকট হবে না। কারণ কোরবানির হাটে অন্য জেলা উপজেলার পশু এলে চাহিদা মিটে যায়।
বালাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া বলেন, কোরবানির পশুর হাটগুলোতে আর্থিক লেনদেন ও ক্রেতার নিরাপত্তায় পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও পুলিশের টহল সদস্যরাও কাজ করবে।