দ্য সিলেট

রবিবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৩ আশ্বিন, ১৪৩২
রবিবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৩ আশ্বিন, ১৪৩২

সিলেট পাসপোর্ট অফিস; নানা কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে দালালচক্র

জৈষ্ঠ প্রতিবেদক ||

সংগৃহীত ছবি

সিলেট পাসপোর্ট অফিস ঘিরে এখনও দালাল। নানা কৌশলে আবেদনকারীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অর্থ। নগরীর আলমপুরে সিলেট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বাইরে লাইন ধরে বসে থাকে দালালেরা। পাসপোর্ট অফিসের বাইরের ফটোকপির দোকনগুলোর সথে রয়েছে দালালদের ‘অলিখিত’ চুক্তি। গ্রামগঞ্জ থেকে আসা সহজ-সরল মানুষদের টার্গেট করে তারা। আবেদন ফরম পূরণ, জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন ভেরিফিকেশন, অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে পিতা মাতার অনুমতি পত্রসহ নানা কাগজপত্রের নাম করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে দালালেরা। পাসপোর্টের আবেদন অনলাইনে (ই-পাসপোর্ট) হওয়াতে অধিকাংশ পাসপোর্টপ্রত্যাশী এই নিয়মের সাথে অপরিচিত। মূলত এই সুযোগ নিচ্ছে দালালেরা। পাসপোর্ট অফিসের বাইরের ফটোকপির দোকানগুলোতে ফরম পূরণের নামে আবেদনকারীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার টাকা। এই টাকার ভাগ পান দালাল, ফটোকপির দোকানের মালিক ও পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে কর্তব্যরত আনসার সদস্য, পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহায়ক, সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, ডাটা এন্টি কন্ট্রোল অপারেটর এদের আলাদা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। এদের মধ্যে থেকে বাইরের দালালদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে অফিস সহায়ক সিন্ডিকেট। কোনো আবেদনকারির আবেদন ভূল কিংবা ফাইল অসম্পূর্ণ থাকলে সহায়তার জন্য অফিস সহায়ক সিন্ডিকেটের সদস্যরা এগিয়ে আসে। তারা আবেদনকারিকে বাইরের ফটোকপি দোকানগুলোতে যেতে বলে। আবেদনকারি দোকানে পৌঁছানোর পূর্বেই তারা ফোনে দালালদের কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়। এরপরই শুরু হয় গলাকাটা ব্যবসা। বিভিন্ন ফরমের নামে আবেদনকারির কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকা।

আবেদনকারিদের অভিযোগ, দালালের সহায়তা ছাড়া পাসপোর্টের আবেদন করা হলে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। আর দালাল ধরলে আবেদনগুলোতে ‘বিশেষ চিহ্ন’ দেওয়া থাকে। চিহ্নধারী আবেদনকারী ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি তোলায় অগ্রাধিকার পাওয়াসহ দ্রুত পাসপোর্ট পান। বিড়ম্বনা এড়াতে অনেকেই বাধ্য হয়ে দালাল মারফত আবেদন জমা দেন।

জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া গ্রামের কৃষক তছির আলী। সিলেট আলমপুর পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা দেওয়ার জন্য আলমপুরের এক কম্পিউটার দোকানদারের মাধ্যমে অনলাইনে ফরম পূরণ করেন। বিনিময়ে তাঁর কাছ থেকে নেওয়া হয় ১৫০০ টাকা। দোকানদার তছির আলীকে জানান, পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ফরম জমা দিলে ডেলিভারি স্লিপ দেবে। কয়েক দিন পর এসে এই কপি দিয়ে পাসপোর্ট নিতে পারবেন। কম্পিউটার দোকানদারের কথামতো ফরম জমা দিতে এসেই তছির আলী পড়েন বিপাকে।

পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা বলেন, ফাইল অসম্পূর্ণ। জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন ভরিফিকেশন লাগবে। তছির আলী আবারো সেই কম্পিউটার দোকানদারের কাছে যান। পরে আরও ৩০০ টাকা দিয়ে সেই কাগজ তুলে আনেন তছির আলী।

সিলেট নগরীর আখালিয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা সজীব আহমদ বলেন, আমি নিজে নিজে অনলাইলে আবেদন করি। যেদিন জমা দেব সেদিন প্রিন্ট আউটের জন্য আলমপুর পাসপোর্ট অফিসের শাহজালাল কম্পিউটার দোকানে যাই। কম্পিউটারের সামনে বসা এক ব্যক্তি আমার আবেদন দেখে বলেন আবেদন হয়নি। জমা দিতে গেলে বাতিল হয়ে যাবে। আমি ঘাবড়ে গেলাম। ততক্ষণে পাশে বসা আরেকজন বললেন সমস্যা নেই সামান্য কিছু খরচ দেবেন ঠিক করে দেব। কথার ফাঁকে আমি বললাম আমার আর্জেন্ট পাসপোর্টের প্রয়োজন ছিল।

সাথে সাথে ওই ব্যক্তি জানতে চাইলেন সুপার এক্সপ্রেস? করে দেওয়া যাবে। ৩০ হাজার টাকা লাগবে। এপর্যায়ে উভয়পক্ষ ২৫ হাজার টাকায় রাজি হলেন। এভাবে একটি দালালচক্র প্রতিদিন অফিসের আশপাশে অবস্থান নেয়। একসময় লাইনে অবস্থান নিলেও দালালরা এখন একটু দূরে অবস্থান নেয়। যারা দ্রুত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট করতে চায়, মূলত তাদেরই টার্গেট করে চক্রটি।

আবেদনকারীদের দাবি, পাসপোর্ট অফিসের বাইরে গড়ে ওঠা বেশিরভাগ ফটোকপির দোকানে দালালরা অবস্থান নেয়। ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে পাসপোর্ট হাতে পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখায়। তবে সময় অনুযায়ী তারা টাকার পরিমাণ বাড়ায়-কমায়।
সিলেট পাসপোর্ট অফিসে হয়রানির এমন ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে।

আবেদনকারীদের কাছ থেকে দালাল চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। দালাল ধরতে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়। কাউকে কাউকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হলেও বেরিয়ে এসে একইভাবে কাজ করে তারা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক এ কে এম মোতাহার হোসেন বলেন, আবেদনকারীকে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করতে হয়। তবে অধিকাংশ পাসপোর্টপ্রত্যাশীর অনলাইনে আবেদন করার অভিজ্ঞতা নেই। ফটোস্টেট-ফটোকপির দোকানে গিয়ে কম্পিউটারে ফরম পূরণ করতে হয়। এসব ব্যক্তি খেয়াল-খুশিমতো অর্থ দাবি করে। অনেক সময় ভুল তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করে দেয়। ব্যাংক ফি গ্রহণ করে তা পরিশোধ না করেই আবেদনকারীকে অফিসে পাঠিয়ে দেয়। এভাবে সেবাপ্রার্থী হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হন।

আর দালাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেখেন, বেশিরভাগ পাসপোর্টপ্রত্যাশীর অনলাইনে আবেদন করার অভিজ্ঞতা নেই। মূলত তারাই ফটোস্টেট-ফটোকপির দোকানে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়েন। এখানে তো আমাদের করার কিছু নেই।’

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ