দ্য সিলেট

বুধবার , ১৮ জুন, ২০২৫, ৪ আষাঢ়, ১৪৩২

সুফল মিলছে না ২৫ কোটি টাকার ট্রাক টার্মিনালের

এখনো সড়কে ট্রাক, ঘটছে দুর্ঘটনা

জৈষ্ঠ প্রতিবেদক || দ্য সিলেট টোয়েন্টিফোরডটকমক

সিলেট নগরীকে যানজট মুক্ত রাখতে দক্ষিণ সুরমা পারাইরচক এলাকায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় সিলেট কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল। তবে এর সুফল পাচ্ছেন না সিলেটবাসী। অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে টার্মিনাল। টার্মিনালে রাখা হচ্ছে না ট্রাক। আগের মতো চন্ডিপুল, কদমতলীসহ কয়েকটি এলাকায় সড়কের উপর রাখা হচ্ছে ট্রাক। এতে করে বাড়ছে দুর্ভোগ। অসংখ্য ছোট-বড় দুর্ঘটনায় ঘটছে প্রাণহানি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ৮ একর ভূমির এই বিশাল টার্মিনালে পার্ক করে রাখা মাত্র চার থেকে পাঁচটি কাভার্ড ভ্যান। টার্মিনালে চালক-সহযোগীদের জন্য নির্মিত দুতলা ভবনের অবস্থা বেশ শোচনীয়। অযত্ন অবহেলায় ভবনটির ভুতুড়ে অবস্থা। ভেতরের আসবাবপত্রগুলো অনেকটা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। টার্মিনাল ভবনের রুমগুলোও তালাবদ্ধ রয়েছে। ময়লা-আবর্জনা ও ধুলাবালি জমে আছে। বিকল ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আসবাবপত্র ও সরকারি মালিকানাধীন লাখ লাখ টাকার সম্পদ।

টার্মিনালের দেখভালের দায়িত্বে থাকা আয়েছ আহমদের (৩৭) ভাষ্য, এখানে কোনো ট্রাক আসে না। যে কাভার্ড ভ্যানগুলো পার্ক করে রাখা, সেগুলো গ্রামের লোকজনের। মাসিক ৪০০ টাকা ভাড়ায় এখানে ৬-৭ কাভার্ড ভ্যান রাখেন স্থানীয় লোকজন। এর বাইরে এই টার্মিনালে আর কোনো গাড়ি পার্ক করা হয় না।

ভবন ঘুরে দেখা গেল দুটি কক্ষে মানুষের বাস। এরা কারা এমন প্রশ্নের জবাবে আয়েছ আহমদ জানালেন, ভাড়াটিয়া। গেল মাসে ইজারা গ্রহীতা ভবনের দুটি কক্ষ ভাড়া দিয়েছেন। ছোট কক্ষ ৩ হাজার আর বড় কক্ষের ভাড়া ৪ হাজার টাকা। জানালেন, পাশেই একটি পাওয়ার প্লান্টের নির্মাণ কাজ চলছে। সেখানকার শ্রমিকেরা কক্ষ দুটি ভাড়া নিয়েছেন।

আয়েছ আহমদ আরো জানান, তারা দুইজন মাসিক ১১ হাজার টাকা বেতনে এখানে শিফটে ডিউটি করেন। দশ মাস ধরে তাদের বেতন বকেয়া পড়ে আছে। দুটি কক্ষ ভাড়া যাওয়ায় সামান্য কিছু পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে মালিকপক্ষ বলছে, ইজারা নিয়ে তারাও বিপদে পড়েছেন। এখানে ট্রাক না আসায় তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। লাভ দূরে থাক, মূলই তুলতে পারছেন না।

জানা গেছে, সিলেট নগরীকে যানজট মুক্ত রাখতে সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পাশে দক্ষিণ সুরমা পারাইরচক নামক স্থানে সিলেট কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। এর আগে ২০১৩ সালের ২৩শে নভেম্বর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি সিলেট কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর ২০১৯ সালের ১৯শে অক্টোবর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এই টার্মিনালের উদ্বোধন করেন।

একই বছরে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে ৩৪ লাখ ৬ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য টার্মিনালটির ইজারা নেয় সিলেট জেলা ট্রান্সপোর্ট মালিক গ্রুপ। তবে, টার্মিনালে ট্রাক ফেরাতে ব্যর্থ হন ইজারা গ্রহীতা। বিষয়টি সমাধানের জন্য ইজারা গ্রহীতা পুলিশের সহায়তাও চেয়েছিলেন। তবে কোনো কাজ হয়নি। মালিক-শ্রমিক পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে টার্মিনালে ট্রাক ফেরানো সম্ভব হয়নি। পার্ক না করে রাস্তায় রাখা হয় ট্রাক। চলে চাঁদাবাজি।

এ বিষয়ে সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জিলু মিয়া বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে টার্মিনালের দূরত্ব বেশি। তাছাড়া ভেতরে খাবারের হোটেল, ওয়ার্কশপ, মসজিদসহ কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। যে কারণে চালকেরা টার্মিনালে আসতে চান না।

টার্মিনালের ইজারা গ্রহীতা কামাল আহমদ বলেন, ২৪ লাখ টাকায় ইজারা নিয়ে আমি লোকসানে পড়েছি। দুই কর্মচারীর বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছি। টার্মিনালে কোনো ট্রাক আসে না। ইজারা নিয়ে লাভ দূরে থাক, উল্টো আরও ৩ লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তবে টার্মিনালে ট্রাক কেন আসে না এর কোনো সন্তোষজনক উত্তর তিনি দিতে পারেননি।

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ