ফের আন্দোলনে কর্মকর্তা-কর্মচারী
দ্য সিলেট রিপোর্ট।।

সংকট পিছু ছাড়ছেনা সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের চতুর্থ এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। সাত বছরেও স্থায়ী ক্যাম্পাসের ভূমি অধিগ্রহণ হয়নি। সেইসাথে একজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী করতে পারেনি কতৃপক্ষ। বর্তমানে দৈনিক মজুরিতে কাজ করছেন হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এরই মধ্যে দুইজন উপাচার্য বদল হয়েছেন। প্রথম উপাচার্য মেয়াদ পুরণ করলেও দ্বিতীয় উপাচার্য মেয়াদপূর্তির আগেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে চলে যান।
সর্বশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ সাপ্তাহ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সাবেক বিভাগীয় প্রধান (মেডিসিন) অধ্যাপক ডা. ঈসমাইল হোসেন পাটোয়ারী। তিনিও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তোপের মুখে পড়েছেন। গেল একমাস ধরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহাট্টাস্থ অস্থায়ী ক্যাম্পাসে অফিস করছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের একটি কক্ষে বসে তার দাপ্তরিক কাজ করছেন। সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টানা আন্দোলনের কারণে তিনি কার্যালয়ে ফিরতে সাহস পাচ্ছেন না।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারসহ ৫৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরআগে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলাটি করা হয়। মামলায় সাবেক উপাচার্য মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী, সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. নঈমুল হক চৌধুরী, উপপরিচালক (পরিবহন ও উন্নয়ন) ফাহিমা খানম চৌধুরী, সহকারী রেজিস্ট্রার অঞ্জন দেবনাথ, সহকারী কলেজ পরিদর্শক মাইদুল ইসলাম চৌধুরী, সহকারী পরিচালক (পরিবহন ও উন্নয়ন) মো. গোলাম সরোয়ার, সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিলাল আহমদ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক (বাজেট) শমসের রাসেল, জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী মো. ফারাজসহ ৫৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পারস্পরিক যোগসাজশে ব্যক্তিগতভাবে বা অন্যদের লাভবান করার উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যমান বিধিবিধান ও আইনকানুন যথাযথভাবে অনুসরণ না করে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়ে বেতন-ভাতা বাবদ সরকারের ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪৯ টাকা আত্মসাৎ করে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
জানা যায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে চাকরি স্থায়ীকরণ ও বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গেল বছরের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর আন্দোলন আরও তুঙ্গে উঠে। আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন সাবেক উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার। এরপর নতুন উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন ডা. ঈসমাইল হোসেন পাটোয়ারী। তিনি প্রথমদিন কার্যালয়ে এসে সভা ডেকে পূর্বের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। একপর্যায়ে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দ্রুত সিদ্ধান্ত বদল করে দ্রুত সভা সমাপ্ত করেন। সেইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ও নিয়োগ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নাজমুল ইসলামকে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন। এরপর গত ১৬ মার্চ উপাচার্যের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেন অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। পরে ২৩ মার্চ উপাচার্য ১২তম সিন্ডিকেট ডাকেন। এ সিন্ডিকেটের পর থেকে উপাচার্য কার্যালয়ে ফেরেন নি।
এদিকে, ১১তম সিন্ডিকেটে গঠিত কমিটির সুপারিশ বাকস্তবায়নের দাবিতে ফের আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনবঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা প্রতিদিনই মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুর একটায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শতাধিক আন্দোলনকারী। মিছিলটি চৌহাট্টা মোড় ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এসে অবস্থান কর্মসূচিতে মিলিত হয়।
এসময় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন- দুই বছরের বেশি সময় ধরে তারা বিনা ভেতন-ভাতায় কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. এনায়েত হোসেন আশ্বাস দিয়ে তাদের দুবছর কাজ করিয়েছেন। সরকার পরিবর্তনের পর চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন ভিসি এনায়েত। একই বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ডা. ইসমাইল হোসেন পাটোয়ারি। তিনি যোগদানের পর থেকে সমস্যা সমাধান না করে উল্টো পথে হাঁটছেন। তাদের অভিযোগ, উপাচার্য আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অস্থায়ী কার্যালয়ে অফিস করছেন। এজন্য তারা বাধ্য হয়ে ফের আন্দোলনে নেমেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদীম সীমান্ত দ্য সিলেটকে বলেন, আমাদের স্পষ্ট দাবি হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম সিন্ডিকেট যে কমিটি গঠিত হয়েছে সেই কমিটি ইতোমধ্যে যে সুপারিশ দিয়েছে সেটি দ্রুত সিন্ডিকেট ডেকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি নিয়ে কোনো লুকোচুরি চলবে না। অন্যথায় আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি দেব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব।
এ বিষয়ে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ঈসমাইল হোসেন পাটোয়ারী সাথে যোগাযোগ করেছে দ্য সিলেট। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, দেখেন এখানকার সমস্যা খুবই জটিল। তার মাঝে একটি পক্ষ আন্দোলন করছে। তারা অস্থায়ী ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে। তাদের প্রতিরোধের কারণে আমি অফিস করতে পারছি না। তবে চেষ্টা করছি। দেখি পরবর্তী সিন্ডিকেট নিয়োগের বিষয়টি কতটুকু সুরাহা করতে পারি।